›জেলা›বাগেরহাটের টমেটো যাচ্ছে মালয়েশিয়া
এই প্রথম বাগেরহাট থেকে বিদেশে টমেটো রপ্তানি শুরু হয়েছে।এরই মধ্যে বাগেরহাটের চাষিদের কাছ থেকে সরাসরি ক্রয় করে ৪০ মেট্রিক টন টমেটো মালয়েশিয়ায় রপ্তানি করা হয়েছে। দেশি বায়ারের মাধ্যমে এসব টমেটো রপ্তানি করা হয়।

আগামী চার দিনের মধ্যে আরো ২৬ মেট্রিক টন টমেটো রপ্তানির প্রস্তুতি চলছে। রপ্তানির খবরে চাষিরা টমেটো চাষে নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন। রপ্তানিকারকদের সঙ্গে জেলার বিভিন্ন এলাকার টমেটো চাষিদের যোগাযোগ করার কাজ চলছে বলে কৃষি বিভাগ জানিয়েছে। টমেটোর পাশাপাশি আগামী দিনে বাগেরহাট থেকে নানা ধরনের সবজি বিদেশে রপ্তানির হবে, এমন আশার কথা জানান তরুণ উদ্যোক্তা প্রকৌশলী ফয়সাল আহম্মেদ।
যেসব জাতের টমেটো বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে, তার মধ্যে রয়েছে বাহুবলী, বিউটিফুল-২, বিপুল প্লাস, পিএম-১২২০ ও মিন্টু সুপার। এসব টমেটো উচ্চ ফলনশীল জাতের ও সুস্বাদু।
বাগেরহাট সদর, চিতলমারী, মোল্লাহাট, ফকিরহাটসহ বিভিন্ন এলাকায় কয়েক দিন ধরে সরজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, বিভিন্ন এলাকায় জমিতে এবং মৎস্যঘেরের পারে গাছে গাছে কাঁচা-পাকা টমেটো ঝুলছে। হাটবাজারে টমেটোর ছড়াছড়ি। ভ্রাম্যমাণ রিকশা ভ্যানে হ্যান্ডমাইকিং করে টমেটো বিক্রি করা হচ্ছে।
হাটবাজারে খুচরায় কেজিপ্রতি টমেটো ৮ থেকে ১০ টাকায় বিক্রি হলেও পাইকারিতে এর অর্ধেক দামে টমেটো বিক্রি হচ্ছে। প্রতিবছরই বাগেরহাটে শীত মৌসুমের এই পর্যায়ে ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম দিকে চাষিদের টমেটো বিক্রি করতে বেগ পেতে হয়। এ কারণে তাঁরা দীর্ঘদিন ধরে বাগেরহাট থেকে টমেটো রপ্তানির দাবি জানিয়ে আসছিলেন।
বাগেরহাট কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, জেলায় এ বছর দুই হাজার ২১০ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের টমেটো চাষ করা হয়েছে। হেক্টরপ্রতি ৩৫ মেট্রিক টন টমেটো উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। সেই হিসাবে জেলায় এ বছর ৭৭ হাজার ৩৫০ মেট্রিক টন টমেটো উৎপাদিত হওয়ার কথা। কিন্তু টমেটো উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। হেক্টরপ্রতি ৪০ মেট্রিক টন পর্যন্ত টমেটো উৎপাদিত হয়েছে। এখনো গাছে গাছে টমেটো ঝুলছে।
চিতলমারীর চর বানিয়ারি গ্রামের শৈলেন নাথ জানান, মৌসুমের প্রথম দিকে পাইকারি বাজারে ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজি দরে টমেটো বিক্রি করেছেন। তাঁর আট বিঘা জমিতে গাছে গাছে পাকা টমেটো ঝুলছে। এখন পাইকারি বাজারে তিন-চার টাকা কেজি দরে টমেটো বিক্রি করতে হচ্ছে। যে দামে টমেটো বিক্রি করতে হচ্ছে তাতে টমেটো তুলতে শ্রমিকের বেতনের টাকাও উঠছে না। এ কারণে টমেটো চাষে আগ্রহ হারাচ্ছেন চাষিরা।
মোল্লাহাট উপজেলার গারফা গ্রামের মো. হেলাল উদ্দিন মোল্লা জানান, এ বছর বিভিন্ন জাতের তিন হাজার টমেটোর চারা রোপণ করেছেন তিনি। টমেটোর খুব ভালো ফলন হয়েছে। প্রথম দিকে ভালো দামে বিক্রি করলেও মাঝে পাঁচ-ছয় টাকা দরে টমেটো বিক্রি করেছেন। এতে তাঁর লোকসান হচ্ছিল। কিন্তু গত চার-পাঁচ দিন ধরে তিনি তাঁর টমেটো রপ্তানির জন্য উদ্যোক্তা ফয়সাল আহম্মেদের কাছে ১২ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেছেন। টমেটো রপ্তানি হওয়ায় তিনি লাভবান হচ্ছেন। শুধু তাঁর একার নয়, আশপাশের অনেক চাষির টমেটো রপ্তানির জন্য ওই উদ্যোক্তা ক্রয় করছেন। এই প্রথম তাঁদের এলাকায় উৎপাদিত টমেটো মালয়েশিয়ায় রপ্তানি হচ্ছে। টমেটো রপ্তানির খবরে হেলাল উদ্দিনের মতো বাগেরহাটের অনেক চাষি খুশি।
বাগেরহাটের মোল্লাহাট উপজেলার গারফা গ্রামের তরুণ উদ্যোক্তা প্রকৌশলী ফয়সাল আহম্মেদ জানান, শীত মৌসুমের শেষ ভাগে বাজারে চাহিদা না থাকায় তাঁদের এলাকায় শত শত বিভাগ জমির টমেটো নষ্ট হয়। কাঙ্ক্ষিত মূল্য না পাওয়ার কারণে চাষিরা জমি থেকে টমেটো তুলতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন। এ কারণে ওই টমেটো চাষিদের কথা চিন্তা করে বিদেশে যাঁরা টমেটো রপ্তানি করেন তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তাঁর ব্যবস্থাপনায় দেশের দুজন বায়ারের মাধ্যমে টমেটো মালয়েশিয়ায় রপ্তানি শুরু হয়েছে। তিনি উদ্যোগ নিয়ে ঘুরে ঘুরে জেলার মোল্লাহাট, চিতলমারী ও ফকিরহাট উপজেলার চাষিদের কাছ থেকে টমেটো কিনে বায়ারের কাছে পৌঁছে দিচ্ছেন। এখান থেকে প্যাকেজিং হয়ে গাড়িতে করে চট্টগ্রাম বন্দরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে টমেটো। এরপর জাহাজে ফ্রিজিং কনটেইনারে করে টমেটো মালয়েশিয়ার বাজারে যাচ্ছে।
প্রকৌশলী ফয়সাল আহম্মেদের তথ্য মতে, ৪০ মেট্রিক টন টমেটো মালয়েশিয়ায় রপ্তানির জন্য চট্টগ্রাম বন্দর থেকে জাহাজে তুলে দেওয়া হয়েছে। আগামী দুই দিনের মধ্যে টমেটোর ওই চালান মালেশিয়ার বাজারে পৌঁছবে। আরো ২৬ টন টমেটোর অর্ডার রয়েছে। সে মোতাবেক তিনি চাষিদের কাছ থেকে টমেটো কিনছেন। আগামী বুধবারের মধ্যে টমেটোর দ্বিতীয় চালান রপ্তানির উদ্দেশ্যে চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছাবে। প্রথম ৪০ মেট্রিক টন টমেটো ছিল মিষ্টি জাতের এবং এখন যেসব টমেটো যাচ্ছে তা অনেকটা টকজাতীয় বলে তিনি জানান।