রাজধানীতে মধ্যরাতে বাসায় ঢুকে ভাঙচুর ও মামলায় ফাঁসানোর হুমকি দিয়ে কোটি টাকা চাঁদা দাবির করার অভিযোগে কলাবাগান থানার ওসি ও এক এসআইকে সাময়িক প্রত্যাহার করা হয়েছে।
প্রত্যাহার হওয়া দুই পুলিশ কর্মকর্তা হলেন- কলাবাগান অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোক্তারুজ্জামান ও উপপরিদর্শক (এসআই) বেলাল হোসেন।
সোমবার (৫ মে) ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেসন্স বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ তালেবুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
জানা গেছে, গত ২ মে এ বিষয়ে থানায় অভিযোগ দেন ভুক্তভোগী বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ড.আব্দুল ওয়াদুদ। পরে গতকাল রোববার অভিযোগপত্রটি গ্রহণ করে পুলিশ।
অভিযোগে আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, গত ২৯ এপ্রিল মধ্যরাতে কলাবাগান থানার এসআই বেলালের নেতৃত্বে কয়েকজন পুলিশ ও ১৫ থেকে ২০ জনের একদল সন্ত্রাসী বাড়িতে জোর করে ঢুকে পড়ে। আমার ম্যানেজার ৯৯৯ এ টেলিফোন করলে শাহবাগ ও নিউমার্কেট থানার টহল টিমের দুটি গাড়ি এসে বাড়ির সামনে মেইন রোডে থামে। ম্যানেজার তখন দেখতে পান কলাবাগান থানার ওসি মোক্তার হোসেন নিউমার্কেট ও শাহবাগের টহল টিমকে চলে যেতে বলেন। তখন এক ভাড়াটিয়া ও নাইট গার্ড ওই টহল টিমকে বিষয়টি জানাতে চাইলে কলাবাগান থানার ওসি তাদের দুজনকে পুলিশের গাড়িতে তোলার নির্দেশ দেন, যা বাসার সিসি ক্যামেরার ফুটেজ রয়েছে।
জানা গেছে, বাড়ির মধ্যে ঢুকে কয়েকজন পুলিশ ড. আব্দুল ওয়াদুদের ঘরের তৃতীয় তলার দরজা ভাঙার চেষ্টা করে। গভীর রাতে সন্ত্রাসী তাণ্ডব ও দরজা ভাঙার শব্দে আশপাশের লোকজনদের মধ্যে ভীতির সঞ্চার হয়। একটি দরজা ভাঙার পর দ্বিতীয় দরজা ভাঙার সময় তিনি কলাবাগান থানার ওসিকে সাহায্যের জন্য ফোন দেন। ওই সময় ওসি তাকে পুলিশের সঙ্গে বের হয়ে আসতে বলেন। সেইসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ডিবির লোক এসেছে তাদেরকে সহযোগিতা করতে।
অভিযোগে তিনি আরও বলেন, কোনো উপায় না দেখে পুলিশের সঙ্গে থানায় যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করি এবং দরজা খুলে দেই। কিন্তু দরজা খোলার সঙ্গে সঙ্গে এসআই বেলাল ও মান্নান আমাকে ধাক্কা মেরে আবার ঘরের ভেতরে টেনে নেয় এবং উগ্রভাবে আমার কাছে কী কী অস্ত্র আছে তা জানতে চায়।
কিছুক্ষণ পর মান্নান নামের একজন পুলিশ সদস্য আমাকে একটু আড়ালে নিয়ে বলেন, এই মুহূর্তে ১ কোটি টাকা দিতে পারলে আমার থানায় যেতে হবে না। বাড়িতে রেখে যাবে। কী মামলা হয়েছে জানতে চাইলে তারা জানায়, কোনো মামলা হয়নি; তারা টাকার জন্য এসেছে। যদি টাকা না দেই তাহলে আমার বিরুদ্ধে ১০টি মামলা দেওয়া হবে।
ভুক্তভোগী বলেন, উপায় না পেয়ে দুই লাখ টাকা পুলিশ সদস্য বেলাল ও মান্নানের হাতে দেই। ব্যাংকিং আওয়ারের মধ্যে বাকি টাকা দেওয়ার শর্তে তিন জন সিভিল ড্রেস পরা ব্যক্তিকে আমার পাহারায় রেখে যায়। তারা নিজেদেরকে ডিবি পুলিশের পরিচয় দিয়েছে। এমনকি যাওয়ার সময় এসআই বেলাল বাড়িতে কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি এ রকম একটি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও নিয়েছে ভিডিও ধারণ করে।
এ বিষয়ে ডিএমপি কমিশনার বরাবর লিখিত অভিযোগ করলে ডিএমপি তাদের সাময়িক প্রত্যাহার করেন।
ঢাকা থেকে ট্রাকে ফেরার পথে অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়ে নওগাঁয় ৬ শ্রমিক হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।
বুধবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে নওগাঁ শহরের বরুনকান্দি বাইপাস এলাকা থেকে অজ্ঞান অবস্থায় তাদের উদ্ধারের পর নওগাঁ সদর হাসপাতালে ভর্তি করে পুলিশ।
তবে এখনো তাদের জ্ঞান না ফেরায় নাম-পরিচয় জানা যায়নি। এরা সবাই অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়েছিলেন বলে ধারণা করছে পুলিশ।
নওগাঁ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জানান, আজ বুধবার সকালে স্থানীয়দের মাধ্যমে খবর পেয়ে শহরের বাইপাস এলাকার বরুনকান্দি এলাকার একটি গ্যাস পাম্পের পাশ থেকে অজ্ঞান অবস্থায় ৬ জনকে উদ্ধার করা হয়। এরপর নওগাঁ সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ৬ জনের মধ্যে ১ জনের সঙ্গে কথা বলতে পেরেছি।
তিনি অস্পষ্টভাবে জানান, তারা সাভারের হেমায়েতপুর থেকে ট্রাকে উঠে বাড়ি ফিরছিলেন। এরপর তাদের কলা, পানি, রুটি আর পান খাওয়ানো হয়েছে। এর বেশি তিনি আর কিছু বলতে পারেনি।
ওসি জানান, বিষয়টি নিয়ে গুরুত্ব সহকারে কাজ করছেন তারা। কখন এবং কিভাবে তাদের ট্রাক থেকে বাইপাস সড়কের গ্যাস পাম্পের পাশে ফেলে দেওয়া হয়েছে এ বিষয় নিয়ে পুলিশ কাজ করছে। শহরের এবং শহরের বাইপাস এলাকার সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ চেক করা হচ্ছে।
নওগাঁ সদর হাসপাতালের আবাসিক স্বাস্থ্য কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. মো. আবু জার গাফফার জানান, হাসপাতালে আসার পরে তাদের প্রাথমিকভাবে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। চিকিৎসকরা সার্বক্ষণিক তাদের দেখাশোনা করছেন।
তিনি বলেন, অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়া রোগীদের জ্ঞান ফিরতে কমপক্ষে ১৮ থেকে ২৪ ঘণ্টা সময় লাগে। তাদের নাম, পরিচয় শনাক্ত এবং তারা কোথার থেকে কোথায় যাচ্ছিলেন তা জানার জন্য এ সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়া ছয় ব্যক্তিকে পান অথবা ডাবের পানির সঙ্গে চেতনা নাশক শক্তিশালী ওষুধ খাওয়ানো হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যা মামলায় বিচারিক আদালতে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত সবারই মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখেছে হাইকোর্ট। এছাড়া, ৫ আসামিকের নিম্ন আদালতের দেয়া যাবজ্জীবনও বহাল রাখা হয়েছে।
আজ রোববার (১৬ মার্চ) বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের হাইকোর্ট বেঞ্চ এই আদেশ দেন। রায় ঘোষণার সময় আদালতে আবরার ফাহাদের পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল কে বি রুমি, জহিরুল ইসলাম সুমন, নূর মোহাম্মদ আজমী, সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার সুমাইয়া আজিজ। আসামিপক্ষে ছিলেন আইনজীবী মাসুদ হাসান চৌধুরী, আজিজুর রহমান দুলু।
রায় ঘোষণার পর আবরার ফাহাদের বাবা বরকত উল্লাহ বলেন, হাইকোর্টের রায়ে আমরা সন্তুষ্ট। তবে রায় দ্রুত কার্যকর করতে হবে। এ সময় সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে র্যাগিংয়ের রাজনীতি বন্ধ করতে হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
আবরার ফাহাদের ভাই ফাইয়াজ বলেন, হাইকোর্ট থেকে এই দ্রুত রায় পাব তা চিন্তায় ছিল না। এই রায়ে আমরা সন্তুষ্ট। যদিও এখনও অনেকগুলো প্রক্রিয়া বাকি রয়েছে। তবে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি জেমি পালিয়ে যাওয়ার বিষয়টিতে মেনে নিতে পারছি না।
অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান বলেন, এই রায়ের মাধ্যমে আবরার ফাহাদের পরিবার এবং জাতি ন্যায় বিচার পেয়েছে। রাষ্ট্রপক্ষ হিসেবে এই রায়ে আমরা সন্তুষ্ট।
আসামিপক্ষের আইনজীবী আজিজুর রহমান দুলু বলেন, এই রায়ে আমরা সংক্ষুব্দ। প্রত্যাশা অনুযায়ী ন্যায়বিচার পাইনি। এই রায়ের বিরুদ্ধে আমরা আপিল বিভাগে যাব। আশা করছি সেখানে ন্যায়বিচার পাব।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি আসামিদের মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন, জেল আপিল ও আপিলের ওপর শুনানি নিয়ে মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ (সিএভি) রাখে হাইকোর্ট। পরে আজ রোববারের কার্যতালিকায় মামলাটি রায়ের জন্য রাখা হয়।
প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর বুয়েটের শেরেবাংলা হল থেকে তড়িৎ ও ইলেকট্রনিকস প্রকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আবরার ফাহাদের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় আবরারের বাবা চকবাজার থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। পরে ওই বছরের ১৩ নভেম্বর বুয়েটের ২৫ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। এরপর ২০২১ সালের ৮ ডিসেম্বর মামলাটির রায় হয়।রায়ে ২০ জনকে মৃত্যুদণ্ড এবং পাঁচজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয় আদালত।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন: বুয়েট ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান রাসেল (সিই বিভাগ, ১৩তম ব্যাচ), সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান রবিন (কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, ১৫তম ব্যাচ), তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক অনিক সরকার অপু (মেকানিক্যাল ইঞ্জনিয়ারিং, ১৫তম ব্যাচ), সাহিত্য সম্পাদক মনিরুজ্জামান মনির (ওয়াটার রিসোর্সেস ইঞ্জিনিয়ারিং, ১৬তম ব্যাচ), ক্রীড়া সম্পাদক মেফতাহুল ইসলাম জিয়ন (মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং, ১৫তম ব্যাচ), উপসমাজসেবা সম্পাদক ইফতি মোশাররফ সকাল (বায়োমেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, ১৬তম ব্যাচ), সদস্য মুনতাসির আল জেমি (এমআই বিভাগ), সদস্য মোজাহিদুর রহমান (ইইই বিভাগ, ১৬তম ব্যাচ), সদস্য হোসেন মোহাম্মদ তোহা (এমই বিভাগ, ১৭তম ব্যাচ), সদস্য এহতেশামুল রাব্বি তানিম (সিই বিভাগ, ১৭তম ব্যাচ), শামীম বিল্লাহ (মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, ১৭তম ব্যাচ), মাজেদুর রহমান মাজেদ (এমএমই বিভাগ, ১৭তম ব্যাচ), খন্দকার তাবাক্কারুল ইসলাম তানভীর (মেকানিক্যাল, ১৭তম ব্যাচ), মুহাম্মদ মোর্শেদ-উজ-জামান মণ্ডল জিসান (ইইই বিভাগ, ১৬তম ব্যাচ), এস এম নাজমুস সাদাত (এমই বিভাগ, ১৭তম ব্যাচ), মোর্শেদ অমর্ত্য ইসলাম (এমই বিভাগ, ১৭তম ব্যাচ), মিজানুর রহমান (ওয়াটার রিসোসের্স, ১৬ ব্যাচ), শামছুল আরেফিন রাফাত (মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং), উপ-দপ্তর সম্পাদক মুজতবা রাফিদ (কেমিকৌশল) এবং এসএম মাহামুদ সেতু (কেমিকৌশল)।
যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত ৫ আসামি হলেন: বুয়েট ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি মুহতাসিম ফুয়াদ (১৪তম ব্যাচ, সিই বিভাগ), গ্রন্থনা ও প্রকাশনা সম্পাদক ইসতিয়াক আহমেদ মুন্না (মেকানিক্যাল, তৃতীয় বর্ষ), আইনবিষয়ক উপসম্পাদক অমিত সাহা (সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং), সদস্য আকাশ হোসেন (সিই বিভাগ, ১৬তম ব্যাচ) ও মোয়াজ আবু হোরায়রা (সিএসই, ১৭ ব্যাচ)।
মৃত্যুদণ্ড পাওয়া আসামি মুনতাসির আল জেমি গত বছরের ৬ আগস্ট গাজীপুরের হাইসিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারের দেয়াল ভেঙে পালিয়ে যায়।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি মুনতাসির আল জেমি জেলখানা থেকে পালিয়েছেন।
গত ৫ আগস্টের পরে এ ঘটনা ঘটলেও ৬ মাস পর সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) বিষয়টি জানানো হয়েছে বলে জানান আবরার ফাহাদের ছোট ভাই ও বুয়েট ছাত্র আবরার ফাইয়াজ।
এ নিয়ে কারা কর্তৃপক্ষ একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, আবরার হত্যা মামলার মৃত্যুদণ্ডাদেশ প্রাপ্ত বন্দি কারাগার হতে পলায়ন সংক্রান্ত সংবাদের প্রতি কারা কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ হয়েছে। জনমনে বিভ্রান্তি নিরসনের লক্ষে কারা কর্তৃপক্ষ এই মর্মে সকলের অবগতির জন্য জানাচ্ছে যে, সংশ্লিষ্ট মৃত্যুদণ্ডাদেশ প্রাপ্ত বন্দি মুনতাসির আল জেমি গত বছরের ৬ আগস্ট হাই সিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগার গাজিপুর হতে ২০২ জন বন্দির সঙ্গে একত্রে (৮৭ জন মৃত্যুদণ্ডাদেশ প্রাপ্ত বন্দিসহ) কারাগারের দেয়াল ভেঙ্গে পলায়ন করে।
এতে আরও বলা হয়, বিষয়টি নিয়ে গত বছরের ১৫ আগস্টে কোনাবাড়ী থানায় মামলা দায়ের পূর্বক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সকল কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়। সকল কর্তৃপক্ষের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ইতোমধ্যে ৩৫জন মৃত্যুণ্ডাদেশ প্রাপ্ত বন্দিসহ ৫১ জন বন্দিকে গ্রেফতার পূর্বক কারাগারের প্রেরণ করা হয়েছে। এছাড়াও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কর্তৃক সংশ্লিষ্ট বন্দিকে গ্রেফতারের প্রচেষ্ট অব্যাহত রয়েছে।
উল্লেখ্য, আবরার হত্যা মামলায় কারাগারের আগত বিভিন্ন দণ্ডে দণ্ডিত ২২ জন বন্দির মধ্যে বর্তমানে ২১ জন বন্দি কারাগারে আটক আছে।
ফেসবুক লাইভে এসে ওসিকে পেটানোর হুমকি দেওয়ার পরদিন সন্ত্রাসীকে ধরতে পুরস্কার ঘোষণা করছে চট্টগ্রাম নগর পুলিশ। সেই সন্ত্রাসীর নাম মো. সাজ্জাদ হোসেন। বৃহস্পতিবার নগর পুলিশের পক্ষ থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এই পুরস্কার ঘোষণা করা হয়।
ছবি: ধারালো অস্ত্র হাতে সন্ত্রাসী সাজ্জাদ হোসেন (সংগৃহীত)
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সাজ্জাদের অবস্থান সম্পর্কে সঠিক তথ্য দিয়ে গ্রেপ্তারে পুলিশকে সহায়তা করবে তাঁকে নগর পুলিশের পক্ষ থেকে উপযুক্ত পুরস্কৃত করা হবে। তবে তথ্য প্রদানকারীর পরিচয় গোপন রাখা হবে।
এর আগে গত মঙ্গলবার রাত ১০টা ৩৯ মিনিটে নিজের ফেসবুক লাইভে নগর পুলিশের বায়েজিদ বোস্তামী থানার ওসি আরিফুর রহমানকে হুমকি দেন সাজ্জাদ। লাইভে তিনি কোনো অবস্থাতেই তাঁর হাত থেকে ওসি বাঁচতে পারবেন না বলে হুঁশিয়ারি দেন। ২ মিনিট ২৭ সেকেন্ডের এই লাইভে ওসিকে অশ্লীল ভাষায় গালাগালও করেন। এ ঘটনায় ওসি বাদী হয়ে ঘটনার দিন রাতে থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন।
সাজ্জাদ হোসেন বিদেশে পলাতক ‘শিবির ক্যাডার’ হিসেবে পরিচিত আরেক সন্ত্রাসী সাজ্জাদ আলীর অনুসারী হিসেবে পরিচিত। অপরাধজগতে পা রেখে দিন দিন বেপরোয়া হয়ে ওঠেন সাজ্জাদ। তাঁর বিরুদ্ধে হত্যা, অস্ত্র, চাঁদাবাজির ১০টি মামলা রয়েছে। গত বছরের ১৭ জুলাই চান্দগাঁও থানা-পুলিশ অস্ত্রসহ সাজ্জাদকে গ্রেপ্তার করে। পরের মাসে তিনি জামিনে বেরিয়ে আসেন। বায়েজিদ বোস্তামী থানাসংলগ্ন হাটহাজারীর শিকারপুরের মো. জামালের ছেলে তিনি। সর্বশেষ গত বছরের ৪ ডিসেম্বর নগরের অক্সিজেন এলাকায় পুলিশ ধরতে গেলে গুলি ছুড়তে ছুড়তে পালিয়ে যান তিনি।
এদিকে সন্ত্রাসী সাজ্জাদ ধরা না পড়ায় নগরের বায়েজিদ বোস্তামী, চান্দগাঁও, পাঁচলাইশ ও হাটহাজারী থানার প্রায় তিন লাখ বাসিন্দা আতঙ্কে রয়েছেন। এলাকায় তাঁর চাঁদা দাবির বিষয়টি অনেকটা প্রকাশ্যেই চলে। মূলত নির্মাণাধীন ভবন ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান থেকে চাঁদা তোলেন এই সন্ত্রাসী।
নগরের বায়েজিদ বোস্তামী থানার অক্সিজেন অনন্যা, শীতলঝরনা, কালারপুল, বায়েজিদ থানার সীমান্তবর্তী হাটহাজারীর কুয়াইশ, নগরের চান্দগাঁও হাজীরপুল ও পাঁচলাইশ এলাকায় ১৫ থেকে ২০ জনের বাহিনী নিয়ে সন্ত্রাসী তৎপরতা চালান সাজ্জাদ। পুলিশ ও স্থানীয় মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চাঁদা না পেলেই সাজ্জাদ গুলি করেন। গত ১৮ সেপ্টেম্বর বায়েজিদ কালারপুল এলাকার একটি নির্মাণাধীন ভবনে চাঁদা না পেয়ে গুলি করেন। ৬০ জন মিলে ওই ভবনটি নির্মাণ করছেন।
স্থানীয় একটি সূত্র বলছে, ভবনমালিকদের সাজ্জাদকে পাঁচ লাখ টাকা দিতে হয়েছে। এর আগে গত ৫ জুলাই বায়েজিদ থানার বুলিয়াপাড়া এলাকায় একটি বাসা লক্ষ্য করে গুলি করেন সাজ্জাদ ও তাঁর সহযোগীরা। এ ঘটনার ভুক্তভোগী মো. ইকবাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘এলাকায় এক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা নেওয়ার প্রতিবাদ করায় সাজ্জাদ আমার বাড়ি লক্ষ্য করে কয়েকটি গুলি করেন।’ এ ঘটনায় ইকবাল বাদী হয়ে বায়েজিদ বোস্তামী থানায় মামলা করেন। চাঁদা না পেয়ে গত বছরের ২৭ অক্টোবর নগরের চান্দগাঁও হাজীরপুল এলাকায় মো. হাছান নামের এক ঠিকাদারের বাসা লক্ষ্য করেও গুলি করেন সাজ্জাদ। এ ঘটনায় হাছান বাদী হয়ে চান্দগাঁও থানায় মামলা করেন।
গত ২১ অক্টোবর নগরের চান্দগাঁওয়ের শমসেরপাড়া এলাকায় আফতাব উদ্দিন নামের এক বালু ব্যবসায়ীকে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করা হয়। পুলিশ ও নিহত আফতাব উদ্দিনের পরিবার বলছে, সাজ্জাদ এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন। এ ঘটনায় আফতাবের পরিবারের করা মামলায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। এর আগে গত ২৯ আগস্ট নগরের বায়েজিদ বোস্তামী থানার অনন্যা আবাসিক ও বায়েজিদ সীমানা-সংলগ্ন কুয়াইশ এলাকায় প্রকাশ্যে গুলি করে খুন করা হয় মো. আনিস ও মাসুদ কায়সার নামের দুই যুবককে। এ ঘটনায় পৃথক দুটি মামলা হয় বায়েজিদ ও হাটহাজারী থানায়।
খুলনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীকে গুলি করে হত্যা করেছে সন্ত্রাসীরা। নিহত শিক্ষার্থীর নাম অর্ণব কুমার সরকার (২৬)। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের এমবিএ-এর ছাত্র ছিলেন।
নিহত অর্নব কুমার সরকার। ছবি: সংগৃহীত।
শুক্রবার (২৪ জানুয়ারি) রাত আনুমানিক ৯টায় খুলনা মহানগরীর কেডিএ অ্যাভিনিউ সড়কের তেঁতুল তলার মোড়ে এ ঘটনা ঘটে। নিহত অর্ণব কুমার সরকার নগরীর বসুপাড়া কলেজিয়েট স্কুলের পাশের বাসিন্দা নীতিশ কুমার সরকারের ছেলে।
খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের এডিসি (মিডিয়া) মোহাম্মদ আহসান হাবীব এই খুনের ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। এডিসি জানিয়েছেন, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীকে হত্যার ঘটনায় জড়িতদের ধরতে পুলিশ অভিযান শুরু করেছে। তবে কী কারণে তাকে হত্যা করা হলো তা জানা যায়নি। এ ঘটনায় থানায় এখনো কোনো অভিযোগ দায়ের হয়নি।
স্থানীয়রা জানান, রাত আনুমানিক ৯টার দিকে শেখপাড়া তেঁতুলতলা মোড়ে মোটরসাইকেলের ওপর বসে চা খাচ্ছিলেন অর্ণব। এসময় ১০-১২ জনের একদল সন্ত্রাসী মোটরসাইকেলে এসে অর্নবকে গুলি করে দ্রুত পালিয়ে যায়। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে বেসরকারি খুলনা সিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।