›জেলা›রূপগঞ্জে সক্রিয় সিন্ডিকেট চক্র, ৬ মাসে ২৭ মোটরসাইকেল চুরি
রূপগঞ্জে অহরহ মোটরসাইকেল চুরি হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। উপজেলায় ৩টি সিন্ডিকেট চক্রের প্রায় ৩০ জন সদস্য মোটরসাইকেল চুরিতে সক্রিয় রয়েছে।

চুরি হওয়া মোটরসাইকেল রূপগঞ্জ, নরসিংদী, কুমিল্লা, ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়া, কাঁচপুর ও মদনপুরের বিভিন্ন গ্যারেজে বিক্রি করা হয়। এ ছাড়া রাজধানী ঢাকার রায়েরবাগ, শনির আখড়া, যাত্রাবাড়ী, ধলপুর ও ধোলাইখালের গ্যারেজগুলোতে বিক্রি করা হয়।অভিযোগ উঠেছে, গ্যারেজ মালিকদের সঙ্গে সিন্ডিকেট চক্রের রয়েছে দহরম-মহরম সম্পর্ক।
জানা গেছে, গত ছয় মাসে রূপগঞ্জের বিভিন্ন এলাকা থেকে ২৭টি মোটরসাইকেল চুরির ঘটনা ঘটেছে। সর্বশেষ রবিবার (২০ এপ্রিল) উপজেলা কার্যালয়ের সামনে থেকে ২টি মোটরসাইকেল চুরির ঘটনা ঘটেছে।
চুরি যাওয়া মোটরসাইকেল মালিকদের থানায় দেওয়া লিখিত অভিযোগ, স্থানীয় পত্রিকা ও থানা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, রূপগঞ্জে অহরহ মোটরসাইকেল চুরি হচ্ছে।
ভুলতা-গোলাকান্দাইল, মুড়াপাড়া, তারাব, কাঞ্চন, পূর্বাচল থেকে সবচেয়ে বেশি মোটরসাইকেল চুরির ঘটনা ঘটে। গত এক সপ্তাহে খোদ উপজেলা কার্যালয়ের সামনে থেকে ৩টি মোটরসাইকেল চুরি হয়েছে। গত দুই মাসে চনপাড়া বটতলা এলাকার ২০০ গজের মধ্যে থেকে ৩টি মোটরসাইকেল চুরি হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চোরের দল রূপগঞ্জের যাত্রামুড়া, তারাব, রূপসী, গন্ধবপুর, বরপা, ভুলতা, গোলাকান্দাইল, মুড়াপাড়া ভূমি অফিস, ইউএনও অফিস, কাঞ্চন, সাবরেজিস্ট্রি অফিসসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় ওঁৎপেতে থাকে।আর সুযোগ বুঝে ছোঁ-মেরে নিয়ে যায় মোটরসাইকেল।
গ্রেপ্তার একজনের বরাত দিয়ে এসআই মফিজুল ইসলাম বলেন, ‘রূপগঞ্জে মোটরসাইকেল চক্রের ৩টি সিন্ডিকেট চক্রের ৩০ জন সদস্য সক্রিয় রয়েছে। একটি মোটরসাইকেল চুরিতে ৩ জন্য সদস্যকে নিয়োগ দেওয়া হয়। তাদের মধ্যে একজন পাহারার দায়িত্বে থাকে। আরেকজন মালিক থাকলে তার সঙ্গে খোশগল্পে মত্ত থাকে।
আরেকজন মোটরসাইকেল নিয়ে চম্পট দেয়। পরে বাকি দুজন ধীরে ধীরে সটকে পড়ে। সব ধরনের মোটরসাইকেলের লক খোলার মতো কৌশল তাদের আয়ত্তে রয়েছে। যারা চুরি করে নিয়ে যায় তারা কামলা হিসাবে পরিচিত। একটি মোটরসাইকেল চুরিতে কামলাদের দেওয়া হয় মাত্র ৩ হাজার টাকা।’
সূত্রটি আরো জানায়, চুরি করার আগেই মনোনীত গ্যারেজের সঙ্গে চুক্তি করা থাকে। চুরির সঙ্গে সঙ্গেই ওই গ্যারেজে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। সেখানেও তাৎক্ষণিক রং-চং করে পাল্টিয়ে দেওয়া হয় মোটরসাইকেলের চেহারা। পরে গ্যারেজ থেকে এসব মোটরবাইক কম দামে বিক্রি করে দেওয়া হয় গ্রাহকদের কাছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কাঁচপুর এলাকার গ্যারেজ মালিক বলেন, ‘আমাগো কি দোষ। আমরা কম দামে পাই, কিনা রাহি।’ চোরদের সঙ্গে যোগসাজশ আছে কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘কেডায় চোর হেউডা কী জানি? আমরা তো মনে করি হোন্ডা যে বেচবার আয়ে তারই।’
কথা হয় গত কয়েকদিন আগে চুরি হওয়া মোটরসাইকেল মালিক সোবহান মিয়ার সঙ্গে। তিনি জানান, গত কয়েকদিন আগে তারাব বিশ্বরোড সংলগ্ন কবরস্থানের সামনে মোটরসাইকেল রেখে জানাজায় অংশ নেন। জানাজা শেষে দেখেন তার মোটরসাইকেল নেই। পরে স্থানীয় এক কারখানার সিসিটিভির ফুটেজে দেখতে পান এক চোর তার মোটরসাইকেল চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে। তিনি এ ব্যাপারে রূপগঞ্জ থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন। এখন অবধি তার মোটরসাইকেল উদ্ধার হয়নি।
গত দু’মাসে চনপাড়া বটতলা এলাকার সীমান্ত মিয়া, রিফাত সরদার ও সাইফুল ইসলামের ৩টি মোটরসাইকেল চুরি হয়েছে। কথা হয় সীমান্ত মিয়ার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘গত ১৫ দিন আগে তার বাড়ির নিচ থেকে চক্র তার মোটরসাইকেল চুরি করে নিয়ে যায়।’
একই এলাকার সাইফুল ইসলাম ও রিফাত সরদার জানান, তাদের মোটরসাইকেল গত এক মাস আগে চুরি হয়ে গেছে।
ভুলতা আমলাবো এলাকার রাসেল মিয়া বলেন, ‘গত ১৪ নভেম্বর সংঘবদ্ধ চোরের দল তার বাড়ির পাশের রাস্তা থেকে চুরি করে নিয়ে যায়। এখনো তার মোটরসাইকেল উদ্ধার হয়নি।’
রূপগঞ্জ সদর ইউনিয়নের রূপগঞ্জ গ্রামের আলমগীর হোসেন বলেন, ‘গত ৮ নভেম্বর তার মোটরসাইকেল সংঘবদ্ধ চোরের দল চুরি করে নিয়ে যায়।’
গাউসিয়া এলাকার আরিফ হোসেন বলেন, ‘গত ১২ জানুয়ারি গাউসিয়া মার্কেটের সামনে থেকে চোরের দল নিয়ে যায়। এখন পর্যন্ত তার মোটরসাইকেলটি উদ্ধার হয়নি।’
রূপগঞ্জ থানার ওসি লিয়াকত হোসেন বলেন, ‘চক্রের বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অভিযান অব্যাহত থাকবে।