আমরা যখন রাতে ঘুমাতে যাই, তখন আগে একটু চিন্তা করি—আগামীকাল কী করবো, কোথায় যাবো, কী খাব !আর তারপর নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে পড়ি। কিন্তু পৃথিবীর আরেক প্রান্তে, এমন এক নগরী আছে, যেখানে মানুষের ঘুম ভাঙে বোমার গর্জনে। সেই গর্জনে কেঁপে ওঠে মাটি, ছিন্নভিন্ন হয় শরীর, আর রক্তের গন্ধ মিশে যায় বাতাসে। সেই নগরীর নাম গাজা।
যেখানে দুধের শিশুও রক্ষা পায় না ইসরায়েলের বর্বর আগ্রাসন থেকে। একসময় যেখানকার মানুষ স্বাধীনভাবে চলাফেরা করতো, আজ তারা বন্দী এক খাঁচার ভেতর। তারা চায় মুক্তি, চায় স্বাধীনতা। আর আমরা? আমরা সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট দিই, প্রতিবাদে স্ট্যাটাস লিখি, তারপর জীবন চালিয়ে যাই আগের মতোই।

মানচিত্রের দিকে তাকালে বুক কেঁপে ওঠে—চারপাশে এতগুলো মুসলিম দেশ থাকা সত্ত্বেও ফিলিস্তিন আজ এতটাই একা, এতটাই অসহায়। আল্লাহ ছাড়া তাদের আর কেউ নেই। শুনতে এতোটাই খারাপ লাগে যে এতো গুলো শক্তিশালী মুসলিম দেশ থাকার পরেও তারদের দোয়া করতে হয় ইমাম মাহদির আগমনের। আর তারা তাকিয়ে থাকে, যদি কোনো ভাই এসে দাঁড়ায় তাদের পাশে। অন্তত কেউ যদি আসে ! কিন্তু কেউ তো আসে না। কেউ না।
তাদের হাহাকের কান্না আর চিৎকারে আমার আপনার ভিতর টা কেপে উঠলেও যাদের মন কেপে উঠার দরকার ছিল তারা দুনিয়া নিয়ে ব্যাস্ত। কিন্তু দেখুন ইসরায়েলের পাশে দাঁড়িয়েছে পশ্চিমা বিশ্ব। ভারত গোপনে সামরিক সহায়তা পাঠায়। আমেরিকা তো খোলাখুলিই অস্ত্র দিয়ে সাহায্য করে। আর আমাদের কিছু নেতা যেন চোখ থাকতেও অন্ধ! তাদের এই অন্ধত্ব কি শুধুই নির্বাকতা, নাকি এর পেছনে আছে কোনো গভীর রহস্য?
চলুন, রহস্য খুঁজি।
আরব দেশগুলো—তাদের মূল আয় তেলের ওপর নির্ভরশীল। আর সেই তেলের বড় ক্রেতা আমেরিকা ও ইউরোপ। ১৯৬৭ সালের যুদ্ধে আরব দেশগুলো ইসরায়েলের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিল ঠিকই, কিন্তু গোপনে কয়েকটি মুসলিম দেশ গাদ্দারি করেছিল বলে শোনা যায়।
ফলাফল?
ইসরায়েলের বিজয় আর ফিলিস্তিনের রক্তমাখা পরাজয়। আজ সেই আরব দেশগুলো বিলাসিতায় ডুবে আছে। দুনিয়ার সবচেয়ে উঁচু ভবন, সবচেয়ে দামি হোটেল, সবচেয়ে ঝলমলে শপিং মল—সবই আছে তাদের কাছে। তারা ভাবে, যুদ্ধ শুরু হলে তাদের দালান ভেঙে যাবে, বাজার হারাবে, ক্ষমতা হারাবে। তাই মুখে নীরবতা, চোখে অন্ধকার।

কিন্তু তারা ভুলে গেছে মুসলিম জাতির গর্বিত অতীত। যেখানে মুসলমানরা একসাথে বুক চিতিয়ে দাঁড়াতো অন্যায়ের বিরুদ্ধে। আজ সেই বুক ভরে গেছে বিলাসিতা আর স্বার্থে। কিন্তু মনে রাখতে হবে—এই দুনিয়া চিরস্থায়ী নয়। একদিন হিসাব হবে। একদিন প্রত্যেক রক্তবিন্দুর জবাবদিহি হবে। তখন আর কোনো সুউচ্চ টাওয়ার, বিলাসবহুল গাড়ি কিংবা বিদেশি মুদ্রা কাউকে রক্ষা করতে পারবে না।
তাই এখনই সময়—ঘুম ভাঙার, প্রশ্ন করার, দাঁড়িয়ে যাওয়ার। আজ যদি আমরা চুপ থাকি, কাল হয়তো আমাদের গল্পও হবে ফিলিস্তিনের মতোই—রক্ত আর কান্নার ইতিহাস।