›ইউরোপ›কেন ইউক্রেনকে ছেড়ে দিচ্ছে আমেরিকা
প্রথমদিকে আমেরিকা ইউক্রেনের পাশে বট বৃক্ষ হয়ে দাঁড়িয়ে ছিল। বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র সহযোগিতা, আর কূটনৈতিক সাপোর্ট—সবই ছিল ইউক্রেনের জন্য। কিন্তু এখন… সেই আগ্রহ কমে এসেছে। কেন? হঠাৎ কী হলো? যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে ইউক্রেন নিয়ে মতভেদ দেখা দিয়েছে। ডেমোক্র্যাটরা এখনো সহায়তার পক্ষে, কিন্তু রিপাবলিকানদের অনেকেই বলছে — এই যুদ্ধ আমাদের না!
তারা বলছে, এত টাকা ইউক্রেনে না দিয়ে আমেরিকার স্কুল, হাসপাতাল আর ইনফ্রাস্ট্রাকচারে লাগাও। এমনকি কংগ্রেসে ইউক্রেনের জন্য নতুন সহায়তা আটকে দিচ্ছে অনেক রিপাবলিকান। আর তাইতো কিছুদিন আগে ট্রাম্প ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টকে একপ্রকার ডেকে এনে অপমান করে বুঝিয়ে দিয়েছে যে আমরা আর তোমার সাথে নেই। অবশ্য আমেরিকা এভাবে মাঝ পথে বিপদে ফেলে অনেকবার চলে এসেছে। এমন অনেক ইতিহাস রয়েছে।

গুঞ্জন হলেও অনেকটা ওপেন সিক্রেট এই যে, ট্রাম্প-পুতিনের মধ্যে রয়েছে ’গোপন’ সম্পর্ক।
২০১৬ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিভিন্ন মিডিয়া এবং রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে যে রাশিয়া ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারণায় সহায়তা করেছে। এর মধ্যে ছিল সোশ্যাল মিডিয়ায় বিভ্রান্তি সৃষ্টি করা, হ্যাকিং এবং নির্বাচনী তথ্য ফাঁস করা। ট্রাম্প অনেকবার পুতিনের প্রশংসা করেছেন এবং তাকে একজন "শক্তিশালী নেতা" হিসেবে উল্লেখ করেছেন। "পুতিন শক্তিশালী নেতা" এবং "আমি চাই পুতিনের সাথে ভালো সম্পর্ক থাকুক" — এই ধরনের মন্তব্যগুলো ট্রাম্পের পুতিনের প্রতি নরম মনোভাবকে তুলে ধরে।
করোনা মহামারির পর আমেরিকার অর্থনীতি এমনিতেই চাপে। তার উপর ইউক্রেন যুদ্ধের পেছনে কয়েক ডজন বিলিয়ন ডলার ব্যয় হয়ে গেছে। এতে সাধারণ আমেরিকান নাগরিকদের মধ্যেও প্রশ্ন উঠেছে—এই খরচ কি আদৌ দরকার ছিল? বিশ্বে এখন শুধু ইউক্রেন-রাশিয়া ইস্যুই না। চীন-তাইওয়ান উত্তেজনা, ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ, ইরান প্রশ্ন—এসব জায়গাতেও আমেরিকার নজর দিতে হচ্ছে। তাই এককভাবে ইউক্রেনকে আর আগের মতো গুরুত্ব দেওয়া যাচ্ছে না।

যুদ্ধ দুই বছর পেরিয়ে গেছে, কিন্তু ইউক্রেন এখনও বড় কোনো জয় পায়নি। রাশিয়াও থামছে না। এমন অবস্থায় পশ্চিমা দেশগুলো ভাবছে—'এই যুদ্ধে যদি জয় নিশ্চিত না হয়, তাহলে এত রিসোর্স ঢেলে কী লাভ? তারা এখন আলোচনার দিকেও তাকাচ্ছে। অনেকেই চাচ্ছে যুদ্ধ একেবারে থেমে না গেলেও অন্তত স্থির হয়ে যাক। একটা ফ্রোজেন কনফ্লিক্ট, যেন রাশিয়া-ইউক্রেন 'অফিসিয়ালি' না হলেও বাস্তবে যুদ্ধ থামিয়ে ফেলে। তাতে করে সবাই ধীরে ধীরে তাদের ফোকাস অন্য জায়গায় দিতে পারে।
সত্যি বলতে, আন্তর্জাতিক রাজনীতি কখনোই স্থায়ী বন্ধুত্ব বা শত্রুতার জায়গা না। সবার আগে আসে নিজেদের স্বার্থ।তাই যেসব দেশ একসময় ইউক্রেনের পাশে ছিল—তারা আজ হিসাব কষে দেখছে, এই সম্পর্ক কতটুকু কাজে দিচ্ছে। আর এখানেই বদলে যাচ্ছে খেলার নিয়ম দাদাগিরি স্বভাবের কারণে আমারিকা বর্তমানে অনেক আলচিত ও সমালোচিত, এদের বন্ধুকে বিপদে ফেলে পালিয়ে যাওয়ার ইতিহাস নেহায়েত কম নয়।